উরুগুয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসে "পেপে" মুজিকা ১৩ মে ২০২৫ তারিখে ৮৯ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র প্রেসিডেন্ট হিসেবে খ্যাতি পাওয়া এই নেতা তার জীবনযাপন, দার্শনিক মনোভাব ও মানবিক নেতৃত্বের জন্য আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপকভাবে সম্মানিত ছিলেন।
মুজিকার শরীরে ২০২৪ সালে খাদ্যনালীর ক্যান্সার ধরা পড়ে, যা পরে তার যকৃতে ছড়িয়ে পড়ে। বয়সজনিত দুর্বলতা এবং অন্যান্য শারীরিক জটিলতার কারণে তিনি চিকিৎসা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং জীবনের শেষ সময়টি কাটান মোন্তেভিদিওর কাছে তার ছোট খামারে, যেখানে তিনি দীর্ঘদিন ধরেই বসবাস করছিলেন। চিকিৎসা থেকে বিরত থেকে প্রকৃতির সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে থাকার ইচ্ছা থেকেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
হোসে মুজিকা ছিলেন তুপামারোস নামক এক গেরিলা আন্দোলনের সদস্য। এই কারণে তাকে প্রায় ১৪ বছর কারাবরণ করতে হয়েছিল, যার মধ্যে দীর্ঘ সময় তিনি নির্জন কারাবাসে ছিলেন। তবে কারাগার থেকে মুক্তির পর তিনি রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশ করেন এবং ধীরে ধীরে উরুগুয়ের প্রধান রাজনীতিবিদদের একজন হয়ে ওঠেন। ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তিনি দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তার শাসনামলে উরুগুয়েতে গর্ভপাত বৈধ করা হয়, সমলিঙ্গ বিবাহ ও গাঁজার বৈধতা প্রদান করা হয়—যা তাকে প্রগতিশীল নেতৃত্বের প্রতীক করে তোলে। তবে তিনি সবচেয়ে বেশি পরিচিত ছিলেন তার ব্যক্তিগত জীবনধারা ও দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মনোভাবের জন্য। তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও বিলাসবহুল সরকারি বাসভবনে না থেকে নিজের পুরনো খামারবাড়িতেই থেকেছেন এবং বেতনের অধিকাংশ দান করে দিয়েছেন দুঃস্থদের সহায়তার জন্য।
মুজিকার মৃত্যুতে লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতারা শোক প্রকাশ করেছেন। চিলি, মেক্সিকো, কলম্বিয়া ও স্পেনসহ বহু দেশের নেতারা তাকে "মর্যাদার প্রতীক" ও "জনগণের নেতা" হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
উরুগুয়ের সরকার মুজিকার মৃত্যুতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। পার্লামেন্ট ভবনে তার মরদেহ রাখা হবে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।
হোসে মুজিকার জীবন এক ব্যতিক্রমধর্মী অধ্যায়—যেখানে একজন রাষ্ট্রনায়ক ক্ষমতার ঊর্ধ্বে উঠে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারেন। তার মৃত্যু শুধু উরুগুয়ের জন্য নয়, গোটা বিশ্বের জন্যই এক বিরাট ক্ষতি।
إرسال تعليق