ছবি: Satheesan.vn, উৎস: Wikimedia Commons, লাইসেন্স: CC BY-SA 3.0
চিরতা (Swertia Chirata) একটি তিক্ত স্বাদের ভেষজ উদ্ভিদ, যা বহু প্রাচীনকাল থেকে আয়ুর্বেদ ও ইউনানী চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই আর্টিকেলে আপনারা চিরতার উপকারিতা, ব্যবহার পদ্ধতি, এবং এর বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানতে পারবেন।
চিরতার উপকারিতা
১. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক: চিরতা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। এটি ইনসুলিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যের কারণে ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা কমাতে পারে।
২. লিভার সুরক্ষা ও ডিটক্সিফিকেশন: চিরতা লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সহায়ক। এটি লিভারকে ডিটক্সিফাই করে এবং সুরক্ষিত রাখে।
৩. হজমশক্তি বৃদ্ধি ও কোষ্ঠকাঠিন্য নিরসন: চিরতার তিক্ত স্বাদ হজমশক্তি বৃদ্ধি করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সহায়ক। এটি প্রাকৃতিক ল্যাক্সেটিভ হিসেবে কাজ করে।
৪. ত্বক ও ক্ষত নিরাময়ে সহায়ক: চিরতার পেস্ট ত্বকের প্রদাহ ও সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে। এটি ক্ষত নিরাময়ে সহায়ক এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যের কারণে ত্বককে সুরক্ষিত রাখে।
৫. জ্বর ও ম্যালেরিয়া নিরাময়ে সহায়ক: চিরতা জ্বর ও ম্যালেরিয়ার উপসর্গ কমাতে সহায়ক। এটি শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং ম্যালেরিয়া জীবাণুর বৃদ্ধি রোধ করতে পারে ।
চিরতা খাওয়ার অপকারিতা
১. হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাওয়া) চিরতা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীরা যদি চিরতা ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ওষুধ একসঙ্গে গ্রহণ করেন, তবে রক্তে শর্করার মাত্রা অতিরিক্ত কমে যেতে পারে, যা হাইপোগ্লাইসেমিয়ার কারণ হতে পারে। এর ফলে মাথা ঘোরা, হাত-পায়ের অসাড়তা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
২. পাকস্থলী ও অন্ত্রের আলসার চিরতা পাকস্থলী ও অন্ত্রের অম্লতা বৃদ্ধি করতে পারে, যা আলসার বা গ্যাস্ট্রিক সমস্যা বাড়াতে পারে। অতএব, গ্যাস্ট্রিক আলসার বা অন্ত্রের সমস্যা থাকলে চিরতা এড়িয়ে চলা উচিত।
৩. গর্ভাবস্থা ও স্তন্যদান গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মহিলাদের জন্য চিরতার নিরাপত্তা সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য নেই। তাহলে, এই অবস্থায় চিরতা ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
খালি পেটে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা
খালি পেটে চিরতা খেলে হজমশক্তি বাড়ে এবং অ্যাসিডিটি কমাতে সাহায্য করে। এটি রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের উপকারি। এছাড়া, চিরতা লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং ত্বকের সমস্যায় উপশম দেয়।
চিরতা ভেজানো জল খেলে কি হয়
চিরতা ভেজানো জল খেলে আপনারা উপরের উপকারিতাগুলো পাবেন। তবে এটি খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ ও উপরে চিরতা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিবেন।
চিরতা কি কিডনির ক্ষতি করে
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, চিরতার অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যবহার করলে কিডনির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। একটি গবেষণায় ইঁদুরে চিরতার মিথানল নির্যাস ব্যবহারের পর কিডনি ও যকৃতের কার্যক্রমে কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যায়নি, তবে অ্যালকালাইন ফসফাটেজ (ALP) স্তরের উল্লেখযোগ্য হ্রাস পাওয়া গেছে। এটি নির্দেশ করে যে, উচ্চ মাত্রায় ব্যবহারে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।
চিরতা কতদিন খাওয়া যায়
চিরতা আপনার ইচ্ছা অনুযায়ী সপ্তাহে ১,২ বার খেতে পারেন। তবে নিয়মিত না খাওয়াই ভালো হবে। কারণ মনে রাখবেন অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়।
চিরতার রস খাওয়ার নিয়ম
চিরতার রস তৈরি করার জন্য, কিছু চিরতা গাছের পাতা বা গুঁড়া নিয়ে পানি দিয়ে ভিজিয়ে রেখে তারপর তার রস তৈরি করে খেতে পারেন। রস খাওয়ার আগে এটি কিছুটা পানি দিয়ে মিশিয়ে নেওয়া ভাল, যাতে তিক্ততা কমে যায়।
চিরতা আর কালমেঘ কী একই
চিরতার বৈজ্ঞানিক নাম Swertia Chirata আর কালমেঘের বৈজ্ঞানিক নাম হলোAndrographis paniculata। এই দুইটি সম্পুর্ন আলাদা আলাদা ভেষজ উদ্ভিদ। তবে তাদের কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা মিল রয়েছে।
শেষ কথা:
চিরতা একটি উপকারী ভেষজ উদ্ভিদ। তবে এটি অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয় কারণ এতে নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। গর্ভবতী, স্তন্যদানকারী মায়েরা, শিশু এবং কিডনি বা যকৃতের সমস্যাযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য চিরতা ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
إرسال تعليق