ইসলামে বিড়াল পোষা: বৈধতা ও উপকারিতা।

বিড়াল

ইসলামে পশু-পাখির প্রতি সদয় হওয়া এবং তাদের যথাযথ যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। এদের মধ্যে বিড়াল একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। ইসলামী শিক্ষা ও ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই, নবী করিম (সা.)-এর জীবনে বিড়ালের প্রতি অসীম দয়া ও ভালোবাসার নিদর্শন ছিল।

বিড়াল পোষা কি ইসলামে জায়েজ?

হ্যাঁ, ইসলামে বিড়াল পোষা বৈধ (জায়েজ)। সহিহ হাদিসে এর সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। আবু হুরায়রা (রা.)-এর নামই এর বড় একটি উদাহরণ। "হুরায়রা" শব্দটির অর্থই হচ্ছে “বিড়ালের পিতা”। তিনি এত বেশি বিড়াল ভালোবাসতেন যে, রাসূল (সা.) তাঁকে এই নামে ডাকতেন।

সহিহ বুখারি ও মুসলিম-এ উল্লেখ আছে, রাসূল (সা.) একবার নামাজে থাকাকালীন তার জামার হাতায় একটি বিড়াল ঘুমিয়ে পড়ে, তিনি নামাজ শেষে জামার হাতা কাটিয়ে দেন, কিন্তু বিড়ালকে জাগান না। এই ঘটনা ইসলামে পশুর প্রতি সদয় হওয়ার স্পষ্ট প্রমাণ।

ইসলামে বিড়াল পালনের উপকারিতা

১. সুন্নাহ পালন ও সওয়াব লাভ

বিড়াল পোষা শুধু বৈধই নয়, এটা একটি সুন্নাহের অংশ বলেও বিবেচিত। পোষা প্রাণীর প্রতি সদয় হওয়া এবং তাদের যত্ন নেওয়া একটি ইবাদতের রূপও ধারণ করতে পারে, যদি তা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করা হয়।

২. মানবিক গুণাবলির চর্চা

একজন মুসলিম যখন বিড়ালের যত্ন নেন, খাবার দেন, নিরাপদ আশ্রয় দেন—তখন তা তার মমতা, দয়া ও দায়িত্ববোধের পরিচয় দেয়। এসব গুণ ইসলামিক চরিত্র গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৩. পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা

ইসলামে পরিচ্ছন্নতা অর্ধেক ইমান। বিড়াল স্বভাবতই পরিচ্ছন্ন প্রাণী। তারা নিজেদের বারবার পরিস্কার রাখে, এবং শরীরের ওপর কোনো নাপাক লেগে থাকলে তা চেটে পরিস্কার করে। হাদিসে আছে, বিড়ালের মুখে লেগে থাকা পানি বা খাবার নাপাক নয়

৪. মানসিক শান্তি ও একাকীত্ব দূরীকরণ

গবেষণায় দেখা গেছে, বিড়াল পোষা মানসিক চাপ কমায়। বিড়ালের কোমল আচরণ ও আদুরে ব্যবহার মানুষের মেজাজ ভাল রাখতে সাহায্য করে, যা বর্তমান ব্যস্ত জীবনে এক অনন্য সঙ্গী হিসেবে কাজ করে।

৫. শিশুদের জন্য শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত

বাচ্চারা যখন ছোটবেলা থেকেই বিড়ালের মতো একটি কোমল প্রাণীর সঙ্গে বড় হয়, তখন তাদের মধ্যে দয়া, সহানুভূতি ও দায়িত্বশীলতা গড়ে ওঠে। এটি ইসলামের আদর্শ অনুযায়ী চরিত্র গঠনের সহায়ক।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা

যদিও বিড়াল পোষা ইসলামে বৈধ, তবে তা করার সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হয়:

• বিড়াল যেন ক্ষুধার্ত বা অসুস্থ না থাকে, তার যথাযথ যত্ন নেওয়া বাধ্যতামূলক।

• তার নিরাপদ ঘর, পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্য রক্ষা করা ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

• তার মাধ্যমে যেন কোনো রোগ বা সংক্রমণ না ছড়ায়, সে জন্য টিকা ও চিকিৎসা প্রয়োজনে নিতে হবে।

ঘরে বিড়াল থাকলে কি নামাজ হবে

অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন ঘরে বিড়াল থাকলে কি নামাজ হবে। হ্যা, অবশ্যই হবে। বিড়াল একটি পবিত্র প্রাণী। মহানবী (স) বিড়ালকে অনেক ভালবাসতেন। বিড়াল কোনো হিংস্র, অপবিত্র প্রাণী নয়। তাই বিড়াল ঘরে থাকলে অবশ্যই নামাজ হবে।

উপসংহার

ইসলামে বিড়াল পোষা একটি বৈধ এবং নৈতিকভাবে সমর্থিত কাজ। এটি শুধু একটি শখ নয়, বরং দয়া, পরিচ্ছন্নতা, ও সুন্নাহ অনুসরণের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি মাধ্যমও হতে পারে। সঠিক নিয়মে এবং যত্নসহকারে বিড়াল পাললে তা আমাদের ব্যক্তিত্ব উন্নয়ন এবং ধর্মীয় চর্চার অংশ হয়ে উঠতে পারে।

Post a Comment

Previous Post Next Post